প্রিয় বরিশাল - খবর এখন স্মার্ট ফোনে প্রিয় বরিশাল - খবর এখন স্মার্ট ফোনে মাদকের আখড়া ও বেদখল চৌমাথা লেকপাড় সড়ক ও ফুটপাত | প্রিয় বরিশাল মাদকের আখড়া ও বেদখল চৌমাথা লেকপাড় সড়ক ও ফুটপাত | প্রিয় বরিশাল
রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৬ অপরাহ্ন
প্রিয় বরিশাল :

খবর এখন স্মার্ট ফোনে...

মাদকের আখড়া ও বেদখল চৌমাথা লেকপাড় সড়ক ও ফুটপাত

নিজস্ব প্রতিবেদন
  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

বিষয়টি নিয়ে অনেকবার প্রতিবেদন হয়েছে। বিকেল হলেই সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বাণিজ্যিক পসরার পাশাপাশি বখাটে আড্ডা বসে এখানে। শতাধিক দোকানপাট আর অটোরিকশা, ইজিবাইক ও মাহেন্দ্র স্ট্যান্ড আড়াল করে রেখেছে নগরীর সৌন্দর্যের প্রতীক চৌমাথা লেকটি। শুধু তাই নয়, লেকের চারপাশে তৈরি ওয়াকওয়ে এখন ব্যবহার অনুপযোগী এসব দোকানপাটের কারণে। আবার রাত যত বাড়ে মাদকাসক্ত ও বখাটেদের আড্ডা ততই বাড়তে থাকে বরিশালের চৌমাথা লেককে ঘিরে। সরেজমিনে ২৪ এপ্রিল বিকেলে হাতেম আলী কলেজ সীমানা ধরে হাঁটতে যেয়ে চোখে পড়ে চৌমাথা লেককে ঘিরে তৈরি এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। পথচারী, যাত্রী এবং স্থানীয় বাসিন্দা সবাই যেন জিম্মি এখানে চৌমাথা মোড়ে। লেকের তিনপাশেই সারি সারি বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান। চা, চটপটি, সেদ্ধ ডিম, বাদাম, ফাস্টফুড আরও কত কি। স্থায়ীভাবে বিভিন্ন নেতাদের নামেই রয়েছে ৯০টি দোকানপাট। আর উত্তর পাশে মহাসড়ক দখল করে তৈরি অবৈধ শিশুপার্কটির ভগ্নাবশেষ এখনো বিষফোঁড়া নগরবাসীর। এসবের ভিড়ে রয়েছে তরুণ-তরুণীদের বাহারি উপস্থিতি। আবার বয়স্কদেরও দেখা যাচ্ছে লেক পাড় ধরে হাঁটার চেষ্টা করে হোঁচট খেতে খেতে সিটি করপোরেশনের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে। এমনই একজন ২২ নং ওয়ার্ড পাবলিক হেলথ কাজীপাড়ার বাসিন্দা আবু সাঈদ। তিনি বলেন, এই অবৈধ দোকানপাটের জন্য একটু হাঁটাচলাও করতে পারিনা আমরা। নাগরিক সুবিধা অসুবিধা আর কবে দেখবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। সিনিয়র সিটিজেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নাসিম আনোয়ার বলেন, রাজনৈতিক নেতারাতো কাজই করতে দেয়না। আমার এলাকার ভিতর কাজীপাড়া পাবলিক হেলথ এর দেয়াল ঘেঁষে অর্ধশত অবৈধ দোকানপাট রয়েছে। সড়ক প্রশস্ত করার জন্য সিটি করপোরেশন সেগুলো উচ্ছেদ করার চেষ্টা করলে বিএনপি ও বাসদ নেতারা এসে বাধা দেয়। পুনর্বাসন না করে নাকি উচ্ছেদ করা যাবেনা। এরপর পরই কিন্তু চৌমাথা লেককে ঘীরে অসংখ্য দোকানপাট তৈরি হয়ে গেছে। ওপাশে হাতেম আলী কলেজের ফুটপাতও বেদখল হতে শুরু করেছে। এদের উচ্ছেদ করতে গেলেই একই দাবী আসবে – হায় হায় করে নেতারা ছুটে আসবেন, বলবেন – পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করা যাবে না।
এখানে লেক পাড়ে ক্রমশ কিশোর গ্যাঙের দৌরাত্ম বাড়ছে দাবী করে বাসিন্দারা বলেন, প্রায় প্রতিদিনই কিশোরদের কয়েকটি গ্রুপ এখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। মাঝরাত পর্যন্ত ওরা এই এলাকায় রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রাখে। প্রায়ই এদের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এখানে যেকোনো সময় খুনখারাবি ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।

বিসিসির উচ্ছেদ কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, এটা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। সিটি করপোরেশনের প্রশাসক থেকে আদেশ আসলে তবেই আমরা উচ্ছেদ অভিযানে নামতে পারবো।
ঢাকা-বরিশাল ও কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক সংলগ্ন ব্যস্ততম সড়ক নবগ্রাম রোডটি বরিশালের বটতলা থেকে সোজা চলে গেছে ঝালকাঠি, বানারীপাড়ার দিকে। মাঝখানে মহাসড়ক অতিক্রম করার ফলে এখানে সড়কের চারটি ভাগ তৈরি হয়েছে এবং যে কারণে নাম হয়েছে চৌমাথা মোড়। আর এই চৌমাথা মোড়ের পশ্চিম পাশে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী মারকাজ মসজিদ ও নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য দৃষ্টিনন্দন একটি লেক। লেকটি মূলত হাতেম আলী কলেজ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব সম্পত্তি হলেও এটির চারপাশের সৌন্দর্যবর্ধন ও রক্ষণাবেক্ষণ এর দায়িত্ব বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের বলে জানান সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ হাওলাদার। তিনি বলেন, আমি আসার আগেই লেকটি আগের প্রশাসন লিজ দিয়ে গেছেন। তবে লেক আমাদের হলেও এটি রক্ষণাবেক্ষণ এর দায়িত্ব বরিশাল সিটি করপোরেশনের।

এই লেকের চারপাশে ওয়াকওয়ে এবং মসজিদের মুসল্লীদের গোসল ও ওজুর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পুকুর বা লেকের ভিতর ছিলো চমৎকার পানির ফোয়ারা। টলটলে স্বচ্ছপানিও হয়তো ছিলো, যা এখন অবৈধ দোকানপাট ও ময়লা আবর্জনায় ঢাকা পড়ে গেছে। পাশাপাশি লিজ দেয়ার কারণে এখানে এখন মাছের চাষাবাদ হচ্ছে। ফলে পুকুরের পানি আর সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী নেই।
যতদূর জানা যায়, বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৩য় পরিষদের মেয়র শওকত হোসেন হিরণ নগরীর কাশিপুর থেকে আমতলা মোড় পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্তকরণসহ ‘নবগ্রাম রোড-চৌমহনী লেক’টির উন্নয়ন কাজ শুরু করেন। ২০১৩ সালে আহসান হাবীব কামাল ৪র্থ পরিষদের মেয়র নির্বাচিত হবার পরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। প্রকল্পের আওতায় লেকটির পূর্ব এবং উত্তর-দক্ষিণ পাড় আরসিসি রিটেইনিং ওয়ালসহ ওয়াকওয়ে নির্মাণ এবং বসার বেঞ্চ স্থাপনসহ দৃষ্টিনন্দন লাইটিং করা হয়। পূর্ব পাড়ে জাতীয় মহাসড়কের পাশে অনেকটা শূন্যের ওপর সুদৃশ্য গাছও লাগানো হয়েছিল। পশ্চিম পাড়ের রাজকুমার ঘোষ রোডটি মেকাডমসহ বিটুমিনাস কার্পেটিং ছাড়াও স্থানীয় এলাকাবাসী ও মারকাজ মসজিদের মুসুল্লীদের জন্য বিশাল ঘাটলা নির্মাণ করে পুরো লেকটির চারপাশে একটি সুদৃশ্য পরিবেশ তৈরী করা হলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। অল্পদিনের মধ্যেই ৫ম পরিষদের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এর সমর্থক কাউন্সিলর ও নেতারা লেকটির পূর্বপাড়ে ওয়াকওয়ে দখল করে পথ খাবারের দোকান বসাতে শুরু করে। ক্রমে তা স্থানীয় প্রভাবশালী কাউন্সিলরের তত্বাবধানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমন্বয়ে গঠিত নেতাদের একটি সিন্ডিকেটের দখলে চলে যায়। আর সিন্ডিকেটকে ম্যানেজ করে একের পর এক পথ খাবারের দোকানে মধ্যরাত পর্যন্ত আড্ডাবাজি, সাথে মাদকের বেঁচাকেনাও শুরু হয়। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে শুরু করে সরকারি জমি দখল করে পুরো এলাকার পরিবেশ বিপন্ন করলেও সাদিক আব্দুল্লাহ পরিষদ বিষয়টি নিয়ে নিশ্চুপ ছিলেন। ফলে নগরবাসীর বিনোদনের জন্য সরকারি ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টনন্দন এ লেক ও তার চারিধারের সুষ্ঠু পরিবেশকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে।
লেকটির চারধারে যেসব অবৈধ পথ খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে, প্রতি রাতে তার বর্জ্য লেকটিতে ফেলা হচ্ছে। লেকটির পয়:নিষ্কাশনের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটি ড্রেন নির্মাণ করা হলেও তার অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে খাবারের দোকানের বর্জ্যে। এলাকাবাসীসহ দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মারকাজ মসজিদের মুসুল্লীদের অজু-গোসলের জন্য যে ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে, তার প্রবেশ ও বহির্গমনের পথটি পর্যন্ত আটকে দিয়েছে এসব পথ খাবারের দোকানদাররা। স্থানীয়রা বলেন, এই ঘাটতো এখন আর ব্যবহার হয়না। মাছচাষ হয় এখানে। জুলাই বিপ্লবের পর মানুষ ভেবেছিলেন অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু কিছুই বদলায়নি, শুধু কয়েকটি মুখ বদলেছে মাত্র। সেইসব প্রভাবশালী কাউন্সিলর পালিয়ে গেলেও এই মুহূর্তে তাদেরই প্রেতাত্মারা নিয়ন্ত্রণ করছে চৌমাথা লেকসহ আশপাশের অবৈধ বাণিজ্য। যে কারণে আগের তুলনায় দোকানপাট আরো বেড়েছে।
এলাকাবাসী জানান, আওয়ামী লীগের সাবেক এক কাউন্সিলর তিন বছরের জন্য লিজ নিয়ে একটানা নয় বছর এই লেক ও লেকের চারপাশ তার দখল বাণিজ্য বজায় রেখেছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর লেকটি নতুন করে লিজ দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। লিজ নিয়েছেন মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি আসাদুজ্জামান লাবিব। তিনি বলেন, দরপত্র অনুসরণ করে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আমি বরাদ্দ পেয়েছি। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে এইসব দোকানপাটের কারণে বড় বিপদে আছি। টিস্যু, খাবারের উচ্ছিষ্ট, পলিথিন ইত্যাদি পুকুরে ফেলছে অনেকেই। এ জন্য মাইকিং করে সতর্ক করার পরও কেউ কর্ণপাত করেনা।

চৌমাথা লেককে ঘীরে এই মুহূর্তে ৯৬ টি অবৈধ দোকানপাট রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবী এদের মধ্যে যেগুলো বন্ধ রয়েছে, সেগুলো তুলে দেওয়া এবং এদের সবাইকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হোক। সড়ক ও ওয়াকওয়ে মুক্ত রেখে ব্যবসা করতে না পারলে তুলে দেওয়ার বিকল্প নেই। তাছাড়া এই দোকানপাট ঘীরে প্রচুর চাঁদাবাজি হচ্ছে। যা নিয়েই মূলত কিশোর গ্যাংয়ের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়ছে।
সামাজিক আন্দোলনের নেতা কাজী মিজানুর রহমান বলেন, কোনো পরিবর্তন নেই। মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে কিছুই হবেনা। সুজন সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, এই লেকটি লিজ দেওয়া উচিত হয়নি। লেক লিজ দেওয়ার কারণে এটির জল সাধারণ মানুষের ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে। আর এ সুযোগটাই নিয়েছে সুবিধাবাদী একটি দল। এটিকে সিটি করপোরেশনের আওতায় নিয়ে কঠিন নজরদারি করা উচিত।
সূত্র :দৈনিক আজকের পরিবর্তন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ

© All rights reserved © priyobarishal.com-2018-2024

Design By MrHostBD
themesba-lates1749691102